
বাল্যবিয়ে একটি বৈশ্বিক মানবাধিকার ইস্যু যার অসম প্রভাব এসে পড়ে কন্যাশিশুদের জীবনে। জনপ্রতিনিধি এবং ধর্মীয় প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তকরণের পাশাপাশি যুবদের সক্রিয় অংশগ্রহণ জোরদারকরণের মধ্য দিয়ে বাল্যবিয়ে নিরসন সম্ভব, বলে দাবী প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল।আন্তর্জাতিক এই উন্নয়ন সংস্থা সাম্প্রতিক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্যক্ত করে যে, গুণগত জেন্ডার-সংবেদনশীল সেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রযুক্তি ও অনলাইন বা সাইবার প্ল্যাটফর্ম বাল্যবিয়ে নিরসনের পথে কার্যকরী কৌশল প্রণয়নে সহায়তা করতে সক্ষম। যা বাংলাদেশসহ এশিয়া মহাদেশে কৈশোরকালীন গর্ভধারণ রোধ ও হ্রাসে ভূমিকা রাখতে পারে।.
সংস্থাটির সাম্প্রতিক প্রকাশিত “লাউডার দ্যান ওয়ার্ডস” শীর্ষক প্রতিবেদনে এই বক্তব্য প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনটি সাজানো হয়েছে বিশ্বব্যাপী প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল-এর সহায়তায় বাল্যবিয়ে এবং ক্ষতিকর কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কাজ করে চলেছে এমন কয়েকজন ছেলে মেয়েদের জীবনের গল্প দিয়ে। লাখো কন্যাশিশুর সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিয়ে বাল্যবিয়ে ক্রমাগত তৈরি করছে নেতিবাচক প্রভাব। আশংকা করা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ৮০০ মিলিয়ন নারী বাল্যবিয়ের কুফলের শিকার হবে, যা বর্তমানে ৬৫০ মিলিয়ন। বাল্যবিয়ে নিরসন এশিয়া মহাদেশের জন্য অপেক্ষাকৃত গুরুতর চ্যালেঞ্জ যেখানে বিভিন্ন দেশের বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে অগ্রগতি সত্ত্বেও চর্চাটি এখনো ব্যাপকভাবে বিদ্যমান।.
দক্ষিণ এশিয়ায় বাল্যবিয়ের হার সর্বোচ্চ। প্রতিবছর প্রায় ১২ মিলিয়নেরও বেশি ১৮ বছরের কম বয়সী কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে, অর্থাৎ প্রতি মিনিটে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ২৩টি কন্যাশিশুর, আর প্রতি ২ সেকেন্ডে একজনের।[1] বৈশ্বিক ব্যাপকতার দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার পরই অবস্থান এশিয়া প্যাসিফিকের। প্রায় ৮ শতাংশ কন্যাশিশু ১৫ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যায় এবং প্রায় ২৬ শতাংশ কন্যাশিশুর বিয়ে হয় ১৮ বছর হওয়ার আগেই।[2] দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাল্যবিয়ের হার অপেক্ষাকৃত বেশি হলেও বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম। উল্লেখ্য যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কৈশোরকালীন প্রসবের হার প্রতি এক হাজারে ৪৭ জন, যা দক্ষিণ এশিয়া অপেক্ষা বেশি (প্রতি এক হাজারে ৩৫ জন)।[3] প্রেস রিলিজে বলা হয়, কন্যাশিশুদের জীবনে উজ্জ্বল ভবিষ্যত এবং আশাপূরণের সম্ভাবনা কখনো কম, কখনো বা নেই বললেই চলে। তাদের মধ্যে অন্তর্নিহিত এবং অর্জিত প্রতিভা বিলুপ্তি এবং বিচ্ছিন্নতার অন্ধকারে আছড়ে পড়ে। কিন্তু এটাই একমাত্র পরিণতি নয়। প্রতিটি মানুষের জীবনের গল্প রূপ নিতে পারে এক শক্তিশালী রূপান্তরের গল্পে। “লাউডার দ্যান ওয়ার্ডস” সেই সব গল্পগুলোই তুলে ধরে যা একই সাথে লড়াইয়ের, বেঁচে থাকার এবং বিজয়ের। “প্রান্তিক পর্যায়ের মুক্তির গল্পগুলো যেকোন শব্দের থেকে জোরালো। এইসব গল্পগুলো সেইসব প্রচেষ্টার কথা বলে যা অসংখ্য ছোট কিন্তু বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ বিজয়ের সাক্ষী।“, বলেন, ভাগ্যশ্রী ডেংলে, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল-এর এশিয়া প্যাসিফিক এবং জেন্ডার ট্রান্সফরম্যাটিভ পলিসি এবং প্র্যাক্টিস এর নির্বাহী পরিচালক। এই প্রতিবেদনে যাদের গল্প উঠে এসেছে তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশ-এর সুইটি। “প্রথমে গ্রামবাসীরা আমার উদ্যোগকে ভালোভাবে গ্রহণ করে নি। তারা আমার কথাকে গুরুত্ব দিতে চাইতো না। কিন্তু আমি আশা ছাড়িনি। পড়াশোনার ফাঁকে আমি বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে আমার প্রচারণা চালিয়ে গিয়েছি।“, বলেন সুইটি যিনি তার কমিউনিটিতে বাল্যবিয়ে ও কৈশোরকালীন স্বাস্থ্য নিয়ে সরব। “লাউডার দ্যান ওয়ার্ডস” প্রকাশনায় এশিয়া থেকে ২০টি গল্পকে সমন্বিত করা হয়েছে যেখানে তুলে ধরা হয়েছে চেঞ্জ মেকারদের কথা যারা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল-এর সাথে মিলে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে কাজ করে চলেছেন, নিজেদের ও অন্য সকল যুবদের জন্য একটি উন্নত বর্তমান এবং ভবিষ্যতের দাবীতে। এই গল্পগুলোই প্রমাণ, জীবনের করুণ গল্প হতে পারে বিজয়ের গল্পও।. .
Ajker Bogura / ডেস্ক রিপোর্ট
আপনার মতামত লিখুন: